দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনে।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সোমবারও করোনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। মৃতের ওই সংখ্যা গত দুই মাসের বেশি সময়ে এক দিনে সর্বোচ্চ।
গত ৭ জানুয়ারি করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ৩১ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৭১৯ জনের দেহে। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৭ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৯টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২০ হাজার ৭৪৮টি। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৮.২৯ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩.০৩ শতাংশ।
গত এক সপ্তাহে দেশে ১ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত সোমবার ১ হাজার ৭৩, গত রোববার ১ হাজার ১৫৯ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। এর আগে শনিবার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৪ জনের দেহে।
গত শুক্রবার করোনা শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৬৩ জনের দেহে। বৃহস্পতিবার শনাক্ত ছিল ১ হাজার ৫১ জন। তারও আগে বুধবার ভাইরাসটি শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৮ জনের দেহে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪৩২ জন। এ নিয়ে সুস্থ হলেন ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৯ জন।
সুস্থতার হার ৯১.৮৩ শতাংশ। সংক্রমণ বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১.৫৩ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মৃত ২৬ জনের মধ্যে ১৭ পুরুষ ও ৯ নারী আছেন। বয়স বিবেচনায় তাদের মধ্যে চল্লিশোর্ধ্ব ৩, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৮ ও ষাটোর্ধ্ব ১৫ জন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
সোমবার (২১ জুলাই) এক শোকবার্তায় উপদেষ্টা বলেন, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বিমানসেনা এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা কখনো পূরণ হবার নয়। তিনি নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি আরও বলেন, "আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আগামীকাল মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।
আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় রাষ্ট্রীয় শোক পালনের বিষয়টি জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, শোক পালনের উদ্দেশ্যে দেশের সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সকল সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
এছাড়াও আহত ও নিহতদের জন্য দেশের সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তিনি আজ সোমবার এক শোকবার্তায় বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।’
তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সকল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে।
উল্লেখ্য, আজ দুপুরে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয় ।
রাজধানীর উত্তরায় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। সোমবার (২১ জুলাই) বিকালে ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শাহজাহান শিকদার এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট ও ৬টি অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে।
এদিকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। আহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ ঘটনায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে জরুরি সেবা খোলা হয়েছে।
বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির একটি ভবন পুরোপুরি ভেঙে গেছে। আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমান বাহিনীর ‘এফ-৭ বিজেআই’ প্রশিক্ষণ বিমানটি সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়।
বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। অনেক দূর থেকেও সেখানে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
২৭ জুলাই হতে শুরু হচ্ছে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন। ২০২৬ সনে হজে গমনেচ্ছুক ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে চার লাখ টাকা জমা দিয়ে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারবেন।
আজ সকালে সচিবালয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২০২৬ সনের হজের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন।
সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে এবছরের ১২ অক্টোবরের মধ্যে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসময়ের মধ্যেই হজযাত্রীদেরকে প্রাথমিক নিবন্ধন ও পরবর্তীতে হজ প্যাকেজ মূল্যের অবশিষ্ট টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি পর্বের ব্যয়ের হিসাব ও বিমানভাড়া নির্ধারণসাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে ২০২৬ সনের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীরা ই হজ সিস্টেম ( www.hajj.gov.bd), লাব্বাইক মোবাইল অ্যাপ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয়, জেলা ও বায়তুল মোকাররম অফিস এবং আশকোনা হজ অফিস হতে প্রাথমিক ও চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারবে। তবে বেসরকারি মাধ্যমে হজ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে অনুমোদিত হজ এজেন্সির মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।
এ সভায় সৌদি সরকার ঘোষিত ২০২৬ সনের হজ কার্যক্রমের রোডম্যাপসহ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা উপস্থাপন করা হয়।
সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় আগামী হজ মৌসুমে মক্কা ও মদিনায় বাড়িভাড়ার পূর্বে হজ ফ্লাইট সিডিউল চূড়ান্ত করা এবং হজযাত্রীদের কোরবানির টাকা নুসুক মাসার প্লাটফর্মে পরিশোধের নির্দেশনা দিয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। এছাড়া মেডিকেল ফিটনেস ব্যতীত হজে গমন না করার জন্যও তাদের পক্ষ হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোডম্যাপের নির্ধারিত সময়সূচির মধ্যে কোন কাজ সম্পন্ন না হলে হজপালন অনিশ্চিত হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সৌদি এ মন্ত্রণালয়।
সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এসভায় হাবের পক্ষ হতে একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এ সংগঠনের পক্ষ হতে বাড়ীভাড়া চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই হজ ফ্লাইট সিডিউল অনুমোদন, কোরবানি ও ক্যাটারিং সার্ভিস বাধ্যতামূলক না করা, হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি, হজ প্যাকেজ ৩৫-৪০ দিনে কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সংগঠনটির পক্ষে সভাপতি ও মহাসচিব প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরেন।
এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুঃ আঃ আউয়াল হাওলাদার, ড. মোঃ আয়াতুল ইসলাম, হজ অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মোঃ মঞ্জুরুল হক, হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার, মহাসচিব ফরিদ আহমদ মজুমদারসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও হাবের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জাতীয় মৎস্য পদক নীতিমালা অনুযায়ী মৎস্য খাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭টি ক্ষেত্রে মোট ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হবে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রঞ্জের পদক দেয়া হবে। এই পদক মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রদান করবেন।
উপদেষ্টা সোমবার (২১ জুলাই) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ বছরের ২২-২৮ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ একযোগে কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অর্থাৎ সমগ্র দেশব্যাপী উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। এবারের মৎস্য সপ্তাহকে জুলাই গণঅভ্যুথানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে মৎস্য পদক প্রদান, বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক কার্যক্রম, র্যালি, আলোচনা, সেমিনার, কর্মশালা, প্রদর্শনী ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি সম্প্রসারণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তথা দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অনস্বীকার্য। নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর, হাওর, বাওড় নিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় আছে ৩৮.৬ লক্ষ হেক্টর, আর বদ্ধ জলাশয় আছে ৮.৫ লক্ষ হেক্টর এবং দক্ষিণের সুবিস্তৃত ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক জলসীমা আমাদের মৎস্য সম্পদের উৎস। মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, টেকসই আহরণ ও উৎপাদনে সরকার কার্যকর, সময়োপযোগী, কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। তাই বাংলাদেশ আজ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
তিনি বলেন, গবেষণালব্ধ, বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব মৎস্য আহরণ, মৎস্য চাষ এবং সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ অন্যান্য বিপন্ন বা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা ও এর টেকসই ব্যবস্থাপনার দৃঢ় প্রত্যয়ে এবারের জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্যাপন করতে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, মাছের প্রজাতিগত ও কৌলিকতাত্ত্বিক (জেনেটিক) বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ, জলজ পরিবেশ ও ইকোসিস্টেম সংরক্ষণ ও দোশ মাছের নিরাপদ প্রজনন ও আবাসস্থল নিশ্চিতকরণ, জলাশয়ে টেকসই উৎপাদন এব্যাহত বাধ্য, পুনরুদ্ধার এবং সমাজভিত্তিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ এবং এর সাথে সম্পর্কিত মৎস্যজীবীর জীবন জীবিকা রক্ষার্থে এবং উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ৬৬৯টি অভয়াশ্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও অভয়াশ্রম গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, “মৎস্য সপ্তাহ পালনের মধ্য দিয়ে আমরা মৎস্য খাতের অবদান তুলে ধরতে চাই। আপনারা জানেন, মৎস্য খাত দেশের মোট জিডিপি'র ২.৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপি'র ২২.২৬ শতাংশ। বছরে ৫০ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। বারো লাখ নারীসহ প্রায় ২ কোটি অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২ শতাংশের অধিক মানুষের জীবন ও জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের সাথে সম্পৃক্ত। আমিষের চাহিদা মেটানোর দিক থেকেও মাথাপিছু দৈনিক ৬০ গ্রাম গ্রহণের বিপরীতে মাছের প্রাপ্যতা ৬৭.৮০ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। তবুও মাথপিছু গ্রহণ আরো বাড়াতে হবে”।
তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ রক্ষার্থে গৃহীত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে। গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু পরিবেশ ও উৎপাদনশীলতা পুন:প্রতিষ্ঠাকল্পে এ বছর ৬৫ দিনের পরিবর্তে ৫৮ দিন (১৫ এপ্রিল হতে ১১ জুন) সমুদ্রে সকল প্রকার নৌযান কর্তৃক মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৬ মার্চ ২০২৫ তারিখ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা, ২০২৩ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মা ইলিশ ও জাটকাসহ অন্যান্য মাছ আহরণ নিষিদ্ধকালে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রান্তিক প্রকৃত মৎস্যজীবীদের তালিকার ভিত্তিতে ভিজিএফ (চাল) প্রদান করা হচ্ছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মোট ১২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৪৯টি জেলে পরিবারকে মোট ১ লক্ষ ০৪ হাজার ৬৬২.৬৭৫ মেট্রিক টন ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সহায়তা দেয়া পরিবার প্রতি চালের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ কেজি করার প্রস্তাব খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। দাদনের দুষ্টচক্র থেকে জেলে ও মৎস্যজীবীদের মুক্ত করার লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো: তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো: ইমাম উদ্দীন কবীর, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহান, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবদুর রউফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
'অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ।
জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানকে নিয়েই অগ্রসর হবার যাত্রা চলমান থাকবে। একে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আজ সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীর দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের ষোড়শ দিনের আলোচনার শুরুতে প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আলোচনা শুরুতে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৫৩ বছরের সংগ্রাম এবং গত বছরের একটি অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান, রক্তপাত ও প্রাণনাশকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এগুলোকে সঙ্গে নিয়েই আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিদিনের আলোচনার শুরুতেই আমরা যাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি, তারা হচ্ছেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা, যেই মুক্তিযুদ্ধ ব্যতীত আমরা কখনো এখানে আসতে পারতাম না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। আমাদের সকল সাফল্য ও ব্যর্থতার ঊর্ধ্বে মুক্তিযুদ্ধ। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে দীর্ঘ সময়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এ রাষ্ট্র অর্জন করেছি, রাষ্ট্রের পথরেখা নির্ধারণ করেছি।
তিনি আরো বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সেই সংগ্রাম অব্যাহত থাকার মধ্য দিয়েই আমরা একটি ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের মধ্যে নিপতিত হয়েছিলাম। সেখান থেকে সকলে মিলে একটি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এ জায়গায় এসেছি। এই পটভূমিকাই জাতীয় সনদের বিবেচ্য, আপনারা সেটা মাথায় রাখুন।
দ্রুত রাষ্ট্রীয় সনদ তৈরীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে, দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছাতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, যদি আমরা ঐক্যমতে ৩১ তারিখের মধ্যে পৌঁছাতে চাই, যেটাকে আমি এটাকে বাধ্যবাধকতা বলে মনে করি, তবে আমাদের হাতে ১০ দিন সময় আছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে একটি/দুটি বিষয় আছে, তার জন্য হয়তো সময় বরাদ্দ করা যাবে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ব্যতিরেকে অগ্রসর হওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা যেহেতু প্রথম থেকে ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ এর ব্যবস্থা রেখেছি সেহেতু কেউ চাইলে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন এবং সেটি জাতীয় সনদে উল্লেখ থাকবে।
এর বাইরে আপনারা কমিশনের ওপর একটি দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠিত হবে কি হবে না, সে বিষয়ে আপনাদের মতামত বিবেচনা করে কমিশন আগামীকাল বা পরশু দিনের মধ্যে জানাবে।
গতকালকের অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সমস্ত রকমের আলোচনা করার পরে, কমিশন এটি ধারনা করছে যে কমিশনের পক্ষ থেকে যে সংশোধিত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে অধিকাংশের একমত আছে এবং কিছু কিছু বিষয়ে কারো কারো দ্বিমত থাকতে পারে।
আজকের মধ্যে পরামর্শ করে বিষয়গুলো মীমাংসা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে জানানো হলে কমিশনের পক্ষ থেকে আগামীকালের বৈঠকে আবার সে বিষয়গুলো উত্থাপন করে একটি সিদ্ধান্তে আসা যায় কিনা সে প্রচেষ্টা করা হবে।
সবশেষে, রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুত একমতে পৌঁছাতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজ বৈঠকে আরও উপস্থিত আছেন- কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. আইয়ুব মিয়া।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
মন্তব্য